Today Entertainment

মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

‘জামায়াতে ইসলাম থেকে ‘ইসলাম’ বাদ দিতে হবে’ : পাপিয়ার যে বক্তব্যে জামায়াতে তোলপাড় (রিভিউ সহ ভিডিও)





জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট সৈয়দা আসিফা আশরাফি পাপিয়ার বক্তব্য নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে ফেসবুক,ব্লগসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। পাপিয়ার দেওয়া বক্তব্যটির ভিডিও যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে।

৫ মিনিট ২ সেকেন্ডের এই ভিডিওতে পাপিয়া বলেন, ‘‘জামায়াতের নাম থেকে ‘ইসলাম’ শব্দটি তুলে দিতে হবে। কারণ তারা ‘ইসলাম’কে অপব্যবহার করছে। আর ইসলাম কখনও বিপথগামীকে সমর্থন করে না।’’

জামায়াতে ইসলামের নেতারা সবাই দীন-দুখী পরিবারের সন্তান বলেও মন্তব্য করেন পাপিয়া।

২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে পাপিয়ার মন্তব্যে স্থানীয় জামায়াতে ইসলামী ক্ষুব্ধ তো বটেই, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই বক্তব্যের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় তা শুনে এখন ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছেন কেন্দ্র থেকে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জের রাজনীতিতে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী সব সময়ই একে অপরের প্রতিপক্ষ। কারণ এখানে মূলত দল হিসেবে আওয়ামী লীগের জনসমর্থন কম। আশির দশক থেকে এই জেলায় সংসদ নির্বাচনসহ স্থানীয় নির্বাচনেও বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়ে আসছে। এ সব নির্বাচনে কখনও বিএনপি আবার কখনও জামায়াতের প্রার্থী জয়ী হয়েছে।

সদ্য সমাপ্ত উপজেলা নির্বাচনের পরে গত ৪ এপ্রিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার চাদলাই এলাকায় ১৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি আয়োজিত জনসভায় পাপিয়া জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে নেতিবাচক মন্তব্য করেন। পাপিয়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। জনসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশিদ। তিনি পাপিয়ার স্বামী। জামায়াতকে নিয়ে দেওয়া নেতিবাচক বক্তব্য সম্বলিত ভিডিওটি প্রথমে স্থানীয় অনলাইন পত্রিকা চাঁপাইনবাবগঞ্জ নিউজ ডটকমে আপলোড হয়। এরপর এটি ইউটিউব, ফেসবুকসহ অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

সদ্য সমাপ্ত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে পাপিয়া বলেন, ‘তারা (জামায়াত) কাকে প্রার্থী দিবে সেটা তাদের ব্যাপার। বিএনপি কাকে প্রার্থী দিবে সেটা বিএনপির দলীয় বিষয়। কিন্তু আজকে জামায়াতে ইসলামীর কথাবার্তায় মনে হচ্ছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিএনপিকে তাদের কথায় উঠতে বসতে হবে। আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই জামায়াত নেতৃবৃন্দকে, তোমাদের লজ্জা থাকা দরকার। ঢাকা শহরে দাড়ি কেটে-টুপি ফেলে, গেঞ্জি-জিন্সের প্যান্ট পরে বিএনপির শেল্টারে খালেদা জিয়ার মিছিলে-খালেদা জিয়াকে নেত্রী মেনে তোমাদের মিছিলে যেতে হয়। আর চাঁপাইনবাবগঞ্জে তোমরা বিএনপির নামে বড় বড় কথা বলে যে সমস্ত অপপ্রচার চালানো হচ্ছে— ভবিষ্যতে সাবধান কিন্তু হতেই হবে।’

উপস্থিত নারীদের উদ্দেশে পাপিয়া বলেন, মা-বোনরা, এই চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৯৮১ সাল থেকে আমি আছি। এখানে দেখছি তারা (জামায়াত) সব সময় কোরআন শরিফ ছুঁইয়ে ভোট চায়। মেয়েদের হাবিয়া দোজখের ভয় দেখাচ্ছে- বেহেস্ত নাকি চলে যাবে জামায়াতের প্রার্থীকে ভোট না দিলে। লতিফুর রহমান (জামায়াত নেতা) যখন হরিণ মার্কায় দাঁড়াল, তখন তারা বলল হরিণে ভোট দিলে বেহেস্ত পাওয়া যাবে। ২০০৮ সালে যখন দাঁড়িপাল্লায় ভোট করল, বলল দাঁড়িপাল্লায় ভোট দিলে বেহেস্ত পাওয়া যাবে। এখন তারা বলছে মোটরসাইকেলে ভোট দিলে বেহেস্ত পাওয়া যাবে। মানে প্রতীকের সঙ্গে সঙ্গে বেহেস্তের পরিবর্তন হচ্ছে। আজকে জামায়াতে ইসলামী যদি বেহেস্ত দেওয়ার মালিক হতো-তাহলে কাদের মোল্লার ফাঁসিটা কেন বন্ধ করতে পারল না? এই জিনিসটা মা-বোনকে বুঝতে হবে। আজকে যারা কোরআন শরিফ নিয়ে আপনাদের শপথ পড়াচ্ছে, তারা কি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে? এই প্রশ্ন করে দেখলেন না আপনারা? আজকে জামায়াতে ইসলামী গাঁজাখোরকে গাঁজার পয়সা দিয়ে, যারা মাতাল তাদের মদের পয়সা দিয়েছে। যারা অপকর্ম করে তাদের অপকর্মের পয়সা দিয়ে ভোট নিয়েছে।


জামায়াতের নাম থেকে ইসলাম শব্দটি তুলে দিতে হবে মন্তব্য করে বিএনপির এই কেন্দ্রীয় নেত্রী বলেন, ‘কারণ ইসলাম কখনও বিপদগামীকে সমর্থন করে না। আজকে বেহেস্ত দিতে চায় তারা, আল্লাহর সঙ্গে শিরক করে। মানে আল্লাহর চাইতে ক্ষমতাধর হয়ে গেছে। মুসলমান থেকে নামধারী বুখারী হয়ে গেছে। আমরা যারা মুসলমান নামাজ পড়ব, রোজা রাখব, সৎপথে চলব, হালাল ইনকাম করব। এরপরে তো আর কথা থাকতে পারে না। আজকে জামায়াতের যে সব মহিলা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মহিলাদের বিভ্রান্ত করছে, তারা যে বেহেস্ত পাবে এর কী গ্যারান্টি আছে?’





তিনি বলেন, ‘এ জন্য আমি স্পষ্ট বলি, ইসলামকে যারা অপব্যবহার করছে, অপপ্রচার করছে, বাড়ি বাড়িতে গিয়ে ওয়াজ নসিহত করছে, অসহায় মহিলাদের বুঝাচ্ছে, প্রত্যেক মুসলমানকে এই সমস্ত মাহফিল পাহারা দিতে হবে। হাদিস-কোরআন বর্ণনা করে যখন জামায়াতের প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইবে সেখানে মাহফিলে যারা উপস্থিত থাকবেন, প্রত্যেককেই বাঁধা দিতে হবে। মসজিদে মসজিদে শুক্রবারে অনেক খুতবায় দেখবেন জামায়াতে ইসলামীর ইমাম সাহেবরা এ কথা সে কথা, দোয়া কালাম বলে লাস্টে কিন্তু জামায়াতের পক্ষে সব দিয়ে দিচ্ছে। এখানে কিন্তু আপত্তি তুলতে হবে। মসজিদ কোনো রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত সম্পত্তি হতে পারে না।’

‘জামায়াতে ইসলামী ইসলামকে অপব্যবহার করছে’ উল্লেখ করে সাবেক এ সংসদ সদস্য বলেন, ‘তেমনিভাবে আওয়ামী লীগ কোনো ধর্মের লোককে শান্তিতে বসবাস করতে দিচ্ছে না। বিএনপি হচ্ছে সকল ধর্মের লোককে শান্তিতে ও সম্প্রীতিতে বসবাস করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। এই জিনিসগুলো বিবেচনা করে চিন্তা করতে হবে। আর আপনারা যারা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মুক্তির দাবিতে মোটরসাইকেলে (জামায়াতের প্রার্থীর প্রতীক) ভোট দিয়ে দিলেন, এটা যে কত বড় বেইনসাফি, কত বড় অপরাধের কাজ হয়েছে। যারা মেয়েদের ভুল বুঝিয়েছে সরলতার সুযোগ নিয়ে, তারা আবার বলেছে স্বামীকে বলবে না। অথচ স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর বেহেস্ত, মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেস্ত। তাহলে তারা কোরআন হাদিসের কীভাবে অপব্যাখ্যা করছে এই জিনিসগুলো কিন্তু বুঝার সময় এসেছে। আর একটা কথা, বিএনপির বিরুদ্ধে বিষোদগার করাই হলো আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের চরম একটা লক্ষ্য। এই লক্ষ্যকে কখনও কামিয়াবি হতে দেওয়া যাবে না। কোথায় বাংলাদেশকে ভারতের আধিপত্যের হাত থেকে রক্ষা করব, কীভাবে স্বৈরশাসকের হাত থেকে বাংলাদেশের মানুষকে মুক্তি করার পথ বের করব, সেই সমস্ত বাদ দিয়ে জামায়াতে ইসলামী মানুষকে কীভাবে বিভ্রান্ত করবে, দলীয় স্বার্থ কীভাবে চরিতার্থ করবে, ব্যক্তিগত স্বার্থ কীভাবে চরিতার্থ করবে সেই সমস্ত কাজ নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে।’

জামায়াতকে হুঁশিয়ারি দিয়ে পাপিয়া বলেন, ‘আপনারা যারা জামায়াতে ইসলামীর নেতা, তারা দীন-দুখী পরিবারের সদস্য। দিন এনে দিন খেয়েছেন। জামায়াতে ইসলামী করতে গিয়ে রিকশাওয়ালার কাছ থেকে এয়ানতের (চাঁদা) পয়সা নিয়েছেন, সেই পয়সা মেরে আজ অট্টালিকার মালিক হয়েছেন, রাঁধুনি হোটেল বানিয়েছেন। পাঁচ তলার মালিক হয়েছেন, এসি রুমে থাকেন এসব বাংলাদেশের মানুষ জানে।’

আসিফা আশরাফি পাপিয়া ৯ম জাতীয় সংসদে বিএনপির সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি ছিলেন। সেই সময় সংসদে ও সংসদের বাইরে তার বিভিন্ন বক্তব্য নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠে। এর আগে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করলে ফোনালাপের মন্তব্য (টেপরেকর্ড) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে দলের ভেতরেও সমালোচনার ঝড় উঠে পাপিয়াকে নিয়ে।

পাপিয়ার সেই ভিডিও

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন